চিরতা বৈজ্ঞানিকভাবে Swertia chirayita নামে পরিচিত। সম্ভবত চিরকাল তিতা গাছ বলেই এর নাম হয়েছে চিরতা। খেতে তিতা হলেও এর উপকারিতা মিষ্টি খাবারের চেয়েও বেশি। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে চিরতার ব্যবহার সারা বিশ্বেই প্রচলিত।
চিরতার পুষ্টিগুণঃ
চিরতা একটি পুষ্টিকর ঔষধি উদ্ভিদ। চিরতার প্রধান সক্রিয় উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে স্বের্টাইন (Swertin), লুকোডিন (Lucodin) এবং জারবোলিন (Jerbolin) যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন।
চিরতার উপকারিতাঃ
- চিরতার রস এলার্জি সারাতে অত্যন্ত কার্যকর। রাতে ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ চিরতা এক গ্লাস (২৫০ মিলি) গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন ছেঁকে দিনের মধ্যে ২-৩ বারে খেতে হবে। এতে আপনার চুলকানি জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
- চিরতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। চিরতা গ্যাস্ট্রাইটিস, বদহজম এবং অম্বল কমাতে ভুমিকা রাখে। চিরতা অন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লির প্রদাহ কমায় এবং খাবারের পরিপাক প্রক্রিয়া সহজতর করে।
- চিরতা আর্থ্রাইটিস, গেঁটেবাত এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- চিরতায় উপস্থিত স্বের্টাইন এবং অন্যান্য উপাদান ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। এটি সেলুলার ড্যামেজ কমায়, বার্ধক্যের লক্ষণ বিলম্বিত করে এবং ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমায়।
- চিরতা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কারে।
- ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় চিরতার ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের চিকিৎসায় চিরতা কার্যকর ভুমিকা পালন করে। ত্বকে সরাসরি প্রয়োগ করলে চিরতা ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
- চিরতা লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং লিভারের টক্সিন দূর করতে ভুমিকা রাখে। চিরতা লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
- চিরতা মস্তিষ্কের সারোটোনিন এবং ডোপামিন স্তর বৃদ্ধি করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে চিরতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- চিরতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
- চিরতা শ্বাসনালী পরিষ্কার করে এবং সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- চিরতার মূত্রবর্ধক গুণ কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- চিরতার স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমানোর ক্ষমতা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- চিরতা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে ত্বককে মসৃণ রাখে এবং ত্বকের গভীর স্তরের আর্দ্রতা বজায় রেখে ত্বকের বার্ধক্যের লক্ষণ বিলম্বিত করে।
- চিরতার নিয়মিত ব্যবহার শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখে। চিরতা নারীদের ঋতুস্রাবের সময় পেটের ব্যথা হ্রাস এবং প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করে।