হলুদ (Turmeric) শুধু রান্নায় ব্যবহৃত হয় না, এর রয়েছে অসাধারণ ঔষধি গুণ। হলুদের বৈজ্ঞানিক নাম Curcuma longa এবং এর প্রধান সক্রিয় উপাদান হল ‘কারকিউমিন’ যা হলুদের ঔষধি গুণাবলীর জন্য প্রধানাত দায়ী। হলুদ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
কাঁচা হলুদ এবং শুকনো হলুদের মধ্যে কোনটা বেশি উপকারী ?
হলুদ শুকিয়ে গেলে তাতে কারকিউমিনের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। বিশেষ করে, রান্নায় ব্যবহৃত হলুদ গুঁড়োতে কারকিউমিনের মাত্রা খুবই কম থাকে। সেই তুলনায় কাঁচা হলুদে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পওয়া যায়। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
প্রতিদিন কতটুকু কাঁচা হলুদ খাওয়া যাবে ?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন আধা থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাঁচা হলুদ সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেতে পারেন। অথবা সমপরিমাণ কাঁচা হলুদ ছোট করে কেটে পানি দিয়ে গিলে খেতে পারে। কাঁচা হলুদ শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কাটানোর কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
হলুদ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং সাধারণ সর্দি, কাশি থেকে শুরু করে জটিল রোগ প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে। হলুদ আর্থ্রাইটিস, মাংসপেশির ব্যথা এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত (Inflammation) সমস্যার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
হজমশক্তি বৃদ্ধিতে করে
হলুদ এনজাইমের কার্যকলাপ এবং অন্ত্রের মুভমেন্ট বৃদ্ধি করে খাবার হজমকে সহজতর করে। হলুদ গ্যাস, অম্বল এবং বদহজমের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
লিভার পরিষ্কার করে
হলুদের ‘কারকিউমিন’ লিভারের এনজাইমগুলিকে উদ্দীপিত করে লিভার পরিষ্কার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। হলুদ লিভার থেকে টক্সিন বের করে লিভেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে হলুদের ভূমিকা
গবেষণায় দেখা গেছে হলুদের ‘কারকিউমিন’ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তার রোধ করতে এবং ক্যান্সারজনিত প্রদাহ (Inflammation) কমাতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। হলুদ ত্বকের প্রদাহ (Inflammation) কমাতে, ব্রণ দূর করতে এবং ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া হলুদ ত্বকের দাগ দূর করতে এবং ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
হলুদের ‘কারকিউমিন’ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভুমিকা রাখে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে মানসিক চাপ কমে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। হলুদ ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
ক্ষত এবং চর্মরোগ নিরাময় করে
হলুদ ক্ষতস্থানে জীবাণুর বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে এবং দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করে। এছাড়াও, হলুদ ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধে এবং ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
হলুদ শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে। হলুদ শরীরের অতিরিক্ত চর্বি এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে।
এছাড়াও, হলুদ শ্বাসনালীকে পরিষ্কার রাখতে এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। হলুদ রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে করে এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্বাস্থ্য উন্নত করে।